জাবি প্রতিনিধি:
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘রাজু দিবস’ উপলক্ষে ‘সন্ত্রাস বিরোধী আলোর মিছিল’ করেছে ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদ।শুক্রবার(১৩ মার্চ) রাত ৮ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবায়ের স্মরণী থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সন্ত্রাসবিরোধী বিভিন্ন আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। মিছিল পরবর্তী সংক্ষিপ্ত সমাবেশ সঞ্চালনা করেন ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের দপ্তর সম্পাদক আতাউল হক চৌধুরী । তিনি বলেন, “রাজুর জীবনদান বৃথা না। শহীদ রাজু আমাদের সন্ত্রাসীদের কর্মকান্ড প্রতিহত করার অনুপ্রেরণা জাগায়।”
সমাবেশে ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সভাপতি মিখা পীরেগু বলেন, “সন্ত্রাসবিরোধী আন্দোলনে শহীদ রাজু আমাদের অনুপ্রেরণা দেয়। রাজু শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস নির্মূলের জন্য জীবন দিয়েছে । কিন্তু আজ ক্যাম্পাসে সন্ত্রাস খুনাখুনি ,অস্ত্রের ঝনঝনানি শুনতে পাই। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন প্রতিটি কর্মী রাজুর আদর্শ ধারণ করে সকল অন্যায় ও সন্ত্রাস রুখে দিয়ে কাজ করে যাব। প্রযোজনে রাজুর মত আমরাও জীবন বিলিয়ে দিবো।”
সমাবেশে সংহতি জানিয়ে জাবি ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) সভাপতি মাহাথির মুহাম্মদ বলেন, “শহীদ রাজু সন্ত্রাস থামাতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছেন। তার আগেও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকে মারা গেছে এবং তা আজও অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু সন্ত্রাসীরা রাজুদের কখনই থামিয়ে রাখতে পরে নি। ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠন শিক্ষার্থীদের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন দমাতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ত্রাসের রাজত্ব চালিয়ে যাচ্ছে। এসব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ছাত্র সমাজ ভূমিকা রেখে যাবে। রাজু দিবস এটাই আমাদের মনে করিয়ে দেয়।’’
উল্লেখ, ১৯৯২ সালের ১৩ মার্চ এই দিনে ছাত্রলীগ এবং ছাত্রদলের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের প্রতিবাদে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতা মঈন হোসেন রাজু মিছিল বের করেন। তাদের ১০-১২ জনের মিছিলটি টিএসসির পূর্ব গেট ধরে ডাস চত্বর ঘুরে যতক্ষণে হাকিম চত্বরের পাশ দিয়ে বর্তমান রাজু ভাস্কর্য ঘুরে টিএসসিতে অবস্থান নেয় ততক্ষণে বিশাল আকার ধারণ করে।এরপর সেই মিছিল আবার ঘুরে টিএসসি’র পশ্চিম দিকের সিঁড়িঘরের সামনে এসে থামে এবং বক্তব্য শুরু হয়। ঠিক সেই মুহূর্তে আবার গোলাগুলি এবং সাথে সাথে আবারো প্রতিবাদের মিছিল-ম্লোগানে প্রকম্পিত ক্যাম্পাস। সেই মিছিলেই হঠাৎ এক রাউন্ড গুলি এসে বিদ্ধ হয় রাজুর মাথায়। পুরো ক্যাম্পাসকে কাঁদিয়ে রাত দশটায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।নিহত হওয়ার সময় রাজুর কাঁধে একটি ব্যাগটি ছিল । তার মধ্যে থাকা একটি নোটবুকের অনেকগুলো পাতায় চারটি পঙক্তি বার বার লেখা ছিল- “অবশেষে সব কাজ সেরে/ আমাদের দেহের রক্তে নতুন শিশুকে/করে যাবো আশীর্বাদ/তারপর হবো ইতিহাস” । সত্যিই রাজু আজ আমাদের জীবন্ত ইতিহাস । যা তিনি তার রক্তের মাধ্যমে গড়ে দিয়ে গেছেন।